সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকে

বিয়ের ব্যাপারে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল সিদ্ধান্ত নেওয়া। প্রায় সব কিছু মিলে যাওয়ার পরেও অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। যার ফলে বিয়ে বিলম্ব হয়। সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অদূর ভবিষ্যতের কথা আমরা কেউ জানিনা। এটা জানা সম্ভব না। ভাল ধারণা নিয়ে এগুতে হবে। মহান আল্লাহর কাছে ভাল কিছু আশা করতে হবে। সতর্ক ও সচেতন হতে হবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরাপুরি প্রস্তুতি নিয়ে বা পছন্দের সবকিছুই মিলে যাবে এটা আশা করলে বিয়ে বিলম্ব হবে।

বিয়েতে প্রতিবন্ধকতা

বিয়েটা ডট কমের ইউজারদের মধ্যে একজনের অভিজ্ঞতার কথা থেকে কিছু কথা শেয়ার করছি-

রাজশাহীর মুনিয়া নামের একটি মেয়ে বিয়েটা ডট কমে রেজিস্ট্রেশন করেছেন বিয়ের জন্য। সে দেখতে সুন্দরী, অনার্স পড়ছে। তার বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ভাই বিবাহিত। বাবা নেই, মা আছেন। মা প্রায় অসুস্থ থাকেন। ভাইয়েরা নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। মা চাইলেও মুনিয়ার জন্য ভাল ছেলে খুঁজে দেওয়ার মত অবস্থা নেই। 

মুনিয়া পড়াশুনায় ব্যস্ত থাকলেও নিজে অনুভব করে যে তার বিয়ে করা দরকার। তার বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, কারও সন্তানও হয়ে গেছে।

মুনিয়া বিয়েটা ডট কমে বিয়ের জন্য রেজিস্ট্রেশন করার পরে অনেকেই তাকে অনুরোধ পাঠানো শুরু করলেন। কয়েকজনের কমিনিকেশন রিকোয়েস্ট গ্রহণ করলেন। কুমিল্লার একটি ছেলে, সফটওয়ার ইঞ্জিনার, ঢাকায় থাকেন। তার সাথে মুনিয়ার কথা বার্তা চলছিল। ভাল বোঝাপড়া হচ্ছিল। এরমধ্যে তানিয়ার প্রোফাইলে আরেকটি অনুরোধ আসলো এক সরকারি চাকুরিজীবীর পক্ষ থেকে। সে ঢাকায় সরকারি চাকুরি করে আর বাড়ি রাজশাহী। মুনিয়া এবার তার সাথে কথা বলা শুরু করে দিল আর কুমিল্লার ছেলেটাকে এড়িয়ে যেতে লাগলো। 

সরকারি চাকরিজীবী ছেলেটার সাথে মুনিয়ার সম্পর্ক অনেক গভীর হতে লাগলো। যদিও তার বয়স মুনিয়ার তুলনায় একটু বেশি। কিন্তু মুনিয়া চিন্তা করলো সরকারি চাকরির কথা। মুনিয়া প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো বিয়ে করবে, ছেলেটাও রাজি। তারা একে অপরকে দেখার সিদ্ধান্ত নিল। এর মধ্যে মুনিয়ার প্রোফাইলে আরেক ছেলের অনুরোধ আসলো, যে দেখতে ঐ সরকারি চাকরিজীবীর চাইতে সুন্দর ও বয়স কম। 

মুনিয়া এবার সরকারি চাকরিজীবীকে বাদ দিয়ে সুন্দর ছেলেটার সাথে কথা বলা শুরু করলো। 

আর এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল। মুনিয়া ভুলে গেল প্রথম সেই সফটওয়ার ইঞ্জিনারের কথা, সরকারি চাকুরিজীবী লোকের কথা। কিন্তু এই সুন্দর ছেলেটা সুন্দর করে কথা বলে, আর বিয়ের কথা বললে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তারপরে বিয়ে করবে বলে মুনিয়াকে জানিয়ে দেয়। 

অন্যদিকে সেই সফটওয়ার ইঞ্জিনার, সরকারি চাকরিজীবী কেউ আর মুনিয়ার ফোন রিসিভ করে না।  কারণ তারা হয়তো বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে অন্য কোথাও। 

তাই বিয়ের ব্যাপারে যে আপনার প্রতি আগ্রহী হয় এবং তার সততা, পেশা, রুচিশীলতা ইত্যাদি যদি পছন্দ হয় তাহলে আর দেরি করা ঠিক নয়। 

marriage_in_islam

এই ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা- রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের নিকট কোনো পাত্র বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যার দ্বীনদারী ও চরিত্র তোমাদের যদি পছন্দ হয়, তাহলে তার সঙ্গে বিয়ে সম্পন্ন করো। অন্যথা জমিনে বড় বিপদ দেখা দেবে এবং সুদূরপ্রসারী বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে।’ (সুনানে তিরমিজি)

 

বিয়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিজের পছন্দের মধ্যে কোনটাকে প্রাধান্য দিবেন আর কোনটাকে ছাড় দিবেন তাও সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিলে সম্পদ বা ক্যরিয়ারের ব্যাপারে ছাড় দিতে হবে। আবার সম্পদ বা ক্যারিয়ার চাইলে বয়স, সুন্দর ইত্যাদি বিষয়কে ছাড় দেওয়ার মনমানসিকতা থাকতে হবে।

 

মুনিয়ার মত অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে কিন্তু পিছিয়ে যাচ্ছে। আরেকটি ব্যাপার কারও সাথে বিয়ের কথা চলাকালীন যদি আরেক জনের সাথে বিয়ে নিয়ে কথা বলা শুরু করেন, তাহলে কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়া আরো কঠিন হবে। এরকম না করাই উচিৎ। আর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে একে-অপরের পছন্দ হলে দেরী করতে নেই।

রাসুল (সা.) বলেন, “তিন কাজে দেরি করবে না। সময় হয়ে গেলে নামাজ আদায়ে, জানাজা এসে গেলে জানাজার নামাজ পড়তে এবং কুফু মিলে গেলে বিবাহে বিলম্ব করবে না।”  (তিরমিজি শরিফ) 

(কুফু হল একে অপরের দ্বীনদারিতা, বংশ, অর্থ-বিত্ত, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি মিলে যাওয়া বা সমকক্ষ হওয়া ইত্যাদি।) 

Share on

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.