বিবাহ বিচ্ছেদ ও ইসলামে বিদ্যমান আইন (পর্ব ২)

তালাক এবং ইসলাম [1]

কোরআন মোতাবেক তালাক দুই ধরণের- তালাক-আল-রাজী এবং তালাক-আল-বিদায়াহ। তালাক-আল-রাজী অর্থ প্রত্যাহার। যে তালাকগুলো প্রত্যাহারযোগ্য সেগুলোই আসলে তালাক-আল-রাজী। তালাক-আল-রাজী আবার দুই ধরণের- তালাক-আল-আহসান এবং তালাক-আল-হাসান।

তালাক-আল-আহসান হচ্ছে সর্বোত্তম পন্থা, অখণ্ডনীয় এবং রাসুল (সাঃ) দ্বারা অনুমোদিত। তালাক-আল-আহসান – এ স্বামী এক তুহুরে একবার উচ্চারণ করে বলবে “আমি তোমাকে তালাক দিলাম” এবং ইদ্দতকাল অর্থাৎ ৯০ দিন পার হতে দিবে। ৯০ দিন পর তাদের তালাক কার্যকর হয়ে যাবে যদি এই সময়ের মধ্যে তারা সহবাসে না যায়। যদি সহবাসে যায় বা প্রত্যাহার করে তবে এই তালাক আর কার্যকর থাকবে না।

 

তালাক-আল-হাসান হল উত্তম পন্থা। এর নিয়ম হচ্ছে স্বামী ৩ তুহুরে উচ্চারণ করে বলবে, “আমি তোমাকে তালাক দিলাম”। এই সময়ে তারা সহবাসে যেতে পারবে না। এটি অপ্রত্যাহারযোগ্য। ৩ উচ্চারণের পূর্বে যদি সহবাসে যায় তবে তা বাতিল হয়ে যাবে।

তালাক- আল-বিদায়াহ হচ্ছে যা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ। যখন তালাকদাতা একসাথে, এক বাক্যে ৩ তালাক দিয়ে দিবে এবং কোন ইদ্দতকাল পর্যন্ত অপেক্ষো করবে না সেটাই তালাক-আল-বিদায়াহ। সূরা আত-তালাক-এ আল্লাহ্‌ এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সাঃ) এর কাছে এক মহিলা এরকম অভিযোগ নিয়ে আসে যে তার স্বামী তাকে তিন বার তালাক দিয়ে দিয়েছে যদিও সে এখন পবিত্র নয়। মহানবী (সাঃ) তার স্বামীকে ডেকে পাঠালেন এবং তাকে বললেন তার স্ত্রী কে গ্রহণ করতে এবং তুহুরে তাকে তালাক দিতে কারণ এই তালাক গ্রহণযোগ্য নয়।

ইলা [1]

এটি এখন অতো বেশি প্রচলিত নয়। ইলা হচ্ছে শপথ নেয়া যে সে তার সহধর্মীনীর সাথে ৪ মাস কোন সহবাসে যাবে না। শপথ করার ইদ্দতকাল পার হলেই তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে।

জাহির [1]

তালাকদাতা যখন বৈবাহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ এমন কারো সাথে তার অর্ধাঙ্গীনীর তুলনা করে এবং এ কারণে যদি সহবাসে না যায় এবং প্রায়শ্চিত্ত না করে সেটা জাহির। সহবাসে না যাওয়ার ইদ্দতকাল পার হলেই তার মধ্যকার সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে। এই পদ্ধতি এখন আর প্রচলিত নয়।

খুলা [2]

খুলা হচ্ছে: কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে স্বামী সে বিনিময়টি গ্রহণ করে স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে; এ বিনিময়টি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত মোহরানা হোক কিংবা এর চেয়ে বেশি সম্পদ হোক কিংবা এর চেয়ে কম হোক।

এ বিধানের দলিল হচ্ছে, আল্লাহ্‌র বাণী: “আর তাদেরকে যা কিছু দিয়েছো (বিদায় করার সময়) তা থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তবে এটা স্বতন্ত্র, স্বামী-স্ত্রী যদি আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না বলে আশংকা করে, তাহলে এমতাবস্থায় যদি তোমরা আশংকা করো, তারা উভয়ে আল্লাহ্‌ নির্ধারিত সীমার মধ্যে অবস্থান করতে পারবে না, তাহলে স্ত্রীর কিছু বিনিময় দিয়ে তার স্বামী থেকে বিচ্ছেদ লাভ করায় উভয়ের কোন গুনাহ নেই।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২২৯]

সুন্নাহ্‌ থেকে এর দলিল হচ্ছে, সাবেত বিন ক্বাইস বিন শাম্‌মাস এর স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি সাবেত বিন ক্বাইসের উপর চারিত্রিক বা দ্বীনদারির কোন দোষ দিব না। কিন্তু, আমি মুসলিম হয়ে কুফরিতে লিপ্ত হতে অপছন্দ করি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিবে? সাবেত মোহরানা হিসেবে তাকে বাগান দিয়েছিল। সে বলল: জ্বি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: বাগানটি গ্রহণ করে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দাও”[সহিহ বুখারী (৫২৭৩)]

এই ঘটনা থেকে আলেমগণ গ্রহণ করেন যে, কোন নারী যদি তার স্বামীর সাথে অবস্থান করতে না পারে সেক্ষেত্রে বিচারক স্বামীকে বলবেন তাকে তালাক দিয়ে দিতে; বরং স্বামীকে তালাক দেয়ার নির্দেশ দিবেন।

এর পদ্ধতি হচ্ছে- স্বামী বিনিময় গ্রহণ করবেন কিংবা তারা দুইজন এ বিষয়ে একমত হবেন; এরপর স্বামী তার স্ত্রীকে বলবেন: আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম কিংবা আমি তোমাকে খুলা তালাক দিলাম, কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন শব্দ।

মুবারাত [3] [4]

মুবারাত হচ্ছে সমঝোতার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করা। যখন দুই পক্ষের কেউই এই বৈবাহিক সম্পর্কে খুশি না তখন তারা এই পদ্ধতিতে তাদের বিবাহ নিষ্পত্তি করতে পারে। এই ধরণের ডিভোর্স স্বামী বা স্ত্রী যে কেউই সূচনা করে থাকে। স্বামী ও স্ত্রী সম্মিলিত-ভাবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার উপর নির্ভর করে স্ত্রী তার স্বামীকে কোন বিনিময় দিবে নাকি দিবে না।

হাদিসে এ ব্যাপারে এসেছে, দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রাঃ) এর কাছে এক দম্পতি আসে যে তারা আর একসাথে থাকতে পারছেন না। উমর (রাঃ) স্ত্রীকে এক নোংরা ঘরে তিন দিন এবং তিন রাত বন্ধ করে রাখলেন। তিন দিন পর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন এই কয়দিন তার কেমন লেগেছে। উত্তরে স্ত্রী বললেন, এই তিন দিন ছিল আল্লাহ্‌র রহমতে বিবাহের পর আমার জীবনের সবচেয়ে শান্তির রাত। এই কথা শোনার পর হযরত উমর (রাঃ) বুঝতে পেরেছেন যে তাদের মধ্যে বিদ্রোহের মাত্রা অনেক এবং তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পন্ন করেন।

আমরা এই ব্লগটি বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও আইনজীবীদের ব্লগের সাপেক্ষে লিখেছি, এজন্যে ভুল ক্রটি থাকতে পারে। এছাড়াও যেকোনো আইনের প্রয়োগ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সুতরাং আপনার ব্যক্তিগত জীবনের নির্দিষ্ট কোন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে অবশ্যই আলেম অথবা আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।

যদি আমাদের এই ব্লগটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং শেয়ার করবেন।

Divorce Law in Bangladesh | Biyeta

Reference:

  1. A video about divorce and related laws in Bangladesh by Lawyer Azizun Nahar Munmun https://www.youtube.com/watch?v=Wkzg1WpNCWw
  2. Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid, Khula and how its done, Retrieved from: https://islamqa.info/bn/26247
  3. Arjun Gupta, Divorce by Mutual Consent in Muslim Law- Mubarat, retrieved from-  https://arjungupta1993.wordpress.com/2015/03/22/divorce-by-mutual-consent-in-muslim-law-mubarat/
  4. Muslim Women Network (MWNUK), Muslim Marriage and Divorce, Retrieved from: http://www.mwnhelpline.co.uk/issuesstep2.php?down=24

 

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.