বিয়ের শাড়ি

পর্ব- ১ঃ শাড়ি প্রসঙ্গ

বিয়ে বললেই যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে লাল রং। বিয়েতে তাই বেছে নিন লাল শাড়ি। একেবারেই লাল পরতে না চাইলে আছে মেরুন, জাম, গাঢ় নীল, বেগুনি বা গোলাপি। বিয়ের দিন বেছে নিন সবচেয়ে জমকালো শাড়িটি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে ঐতিহ্যবাহী শাড়িটি বেছে নিন। উপাদান হতে পারে জামদানি, বেনারসি, কাতান, টিস্যু বা মসলিন। পেটানো জরিতে মিনা করা, সিকোয়েন্সের ভারী কাজ, এমব্রয়ডারি, মুক্তা বা কুন্দনের কাজ করা শাড়ি বেছে নিতে পারেন।

বিয়েতে উজ্জ্বল বাহারি রঙ আর কারুকাজের শাড়ির সমারোহ অন্যরকম মাধূর্য নিয়ে আসে। বেনারসি-কাতান ছাপিয়ে মাঝের সময়টুকুতে আমরা দেখেছি বিদেশি শাড়িগুলোর জয়-জয়কার। ইদানিং দেশিয় শাড়ি আবার ফিরে আসছে সমহিমায়। অনেকেই বিয়ের মতো বড় আয়োজনে সরিয়ে রাখেন দেশিয় শাড়ি। কিন্তু দেশিয় শাড়ির ঐতিহ্য ও আভিজাত্য বাঙালি বধূর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলবে বহু গুণে।

বিয়ে মানেই এনগেজমেন্ট-গায়েহলুদ-বিয়ে-বৌভাত। তাই শাড়ি দরকার বেশ কয়েকটি। এনগেজমেন্ট এ নিজের রুচি এবং ব্যক্তিত্ব অনুযায়ি ঘরোয়া পরিবেশে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের শাড়িটি। আর গায়ে হলুদে সুতি শাড়িই সবচেয়ে মানানসই। সুতির পাশাপাশি এখন চলছে টাঙ্গাইল হাফ সিল্ক বা সফট সিল্ক। তাছাড়া জামদানি তো আছেই। জামদানি বা সুতি শাড়িতে নিজের পছন্দ মতো পাড় লাগিয়ে নিতে পারেন। আরো গর্জিয়াস দেখাবে। চিরায়ত লাল পাড়ের হলুদ শাড়ির পাশাপাশি কমলা, গাঢ় সবুজ, কাচাঁ মেহেদি, হালকা বেগুনি চলছে এখন। অথবা বেছে নিতে পারেন একরঙা কাতান শাড়ি।

এবার আসা যাক বিয়ের শাড়ির প্রসঙ্গে। চিরন্তন লাল শাড়ি যদি পড়তেই না চান তাহলে আছে মেরুন, জাম, গাঢ় নীল, বেগুনি বা গোলাপি। বিয়ের দিন বেছে নিন সবচেয়ে জমকালো শাড়িটি। এক্সপেরিমেন্ট না করে ট্রেডিশনাল শাড়িটি বেছে নিন। ম্যাটেরিয়াল হতে পারে বেনারসি, কাতান, টিস্যু বা মসলিন। পিটানো জরির মিনা করা, সিকোয়েন্সের ভারি কাজ, অ্যামব্রয়ডারি, মুক্তা বা কুন্দনের কাজ করা শাড়ি বেছে নিতে পারেন।

বৌভাতে বেছে নিতে পারেন ফ্যাশনেবল, ট্রেন্ডি হালকা কাজ ও রঙের শাড়ি। রঙ হতে পারে গোল্ডেন, পেয়াজ, সফট পিংক, পিচ এমকি সাদা। অনেকেই সাদা পরছেন এখন বউভাতে, এমকি বিয়েতেও। বৌভাতে ভালো লাগবে সিফন, মসলিন আর হালকা কাজের জামদানি। সঙ্গে বেছে নিন কন্ট্রাস্ট ওড়না। সাদার শুভ্রতা আপনাকে অনন্য করে তুলবে।

বিয়ের শাড়ির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে

যদি উচ্চতা কম হয় তাহলে বেছে নিন সরু পাড় বা পাড় ছাড়া শাড়ি। উচ্চতা ভালো হলে চওড়া পাড়ের শাড়ি পরুন।আপনার গড়ন হালকা শুকনো হলে ভারি শাড়ি বেছে নিন। শাড়িটি হতে পারে টিস্যু বা মসলিনের আর ভারি কাজের।ভারি গড়নের হলে বেছে নিন সফট ম্যাটেরিয়ালের গাঢ় রঙের শাড়ি। যেমন শিফন বা জর্জেট। গায়ের রঙ শ্যামলা বা কালো হয় তবে একটু গাঢ় রঙের শাড়ি বেছে নিন। যেমন ব্লাড রেড, গাঢ় নীল বা গোলাপি। পেঁয়াজ বা বেগুনি রঙের শাড়ি মানিয়ে যাবে সবাইকে।

কোথায় পাবেন, কেমন দামে

মনের মত বউ সাজাতে কে না চায় নিজেকে? তবে পছন্দের শাড়িটি কোথা থেকে কিনবেন তা নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়ে যান অনেকে। তাদের ক্ষেত্রে মিরপুর অরিজিলান ১০ এর বেনারসি পল্লীতে আছে অসংখ্য শাড়ির দোকান। এখানে দেশি-বিদেশি নানা রকমের ও বাজেটের শাড়ি পাবেন। এছাড়াও মনে রেখো, প্রিয়, জ্যোতি, কুমুদিনি বিয়ের শাড়ির জন্য বিখ্যাত। বেইলি রোডের নাটক পাড়া তো আছেই। আড়ং, বিবিয়ানা, ড্রেসিডেল, মায়াসির দেশিয় কাতান জামদানি শাড়ির জন্য বিখ্যাত। ইন্ডিয়ান জমকাল শাড়ি চাইলে আর বাজেট ভালো হলে চলে যান জারা, নাবিলা বা ভাসাবিতে।

দাম-দর

-বেনারসি শাড়ি ১০০০০-২৫০০০ টাকা

-কাতান ১০০০০-৩৫০০০ টাকা

-জামদানি ৫০০০-২৫০০০ টাকা

-মসলিন ও টিস্যু কাপড়ের ভারী কাজের শাড়ি গুলো ২০০০০-১ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

ডিজাইন ও দোকান ভেদে শাড়ির দাম ভিন্ন হতে পারে।

আরো কিছু কথাঃ

-বিয়ের অনেক শখের ভারী শাড়িটি জীবনে একবারই হয়ত পড়া হয়। তারপর তা থাকে বাক্স বন্দী। তাই এমন শাড়ি বেছে নিন যা পরবর্তীতেও কাজে লাগবে।

-অনেক ক্ষেত্রে শাড়ির সাথেই মিলানো ওড়না পাওয়া যায় বা বেছে নিন কন্ট্রাস্ট ওড়না। যেমন সাদার সাথে লাল ওড়না বা লাল শাড়ির সাথে নীল ওড়না।

-সময় নিয়ে অনেক দোকান ঘুরে ও অভিজ্ঞ কাউকে সাথে নিয়ে শাড়ি কিনুন। বর পক্ষ থেকে শাড়ি কেনা হলে আপনার পছন্দ ও রুচি জানিয়ে দিন।

-থ্রি-কোয়ার্টার বা ফুল স্লিভ হাতের ব্লাউজ এখন বেশ চলছে।

-শাড়ি নির্বাচনের সময় আপনার জন্য সেটি আরামদায়ক কিনা দেখে নিন।

-শাড়ির ঐতিহ্যে, আভিজাত্যে আর বাঙালিয়ানায় আপনার বিয়ের দিনে হয়ে উঠুন অনন্যা।

বাজেট কম? ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে পাবেন কম দামে ভালো মানের শাড়ি। তবে প্রথমেই মনে রাখতে হবে বাজেটের কথা। বাজেট বুঝে পথ চলতে হবে আপনাকে।

লিখেছেন- মোঃ জিহাদ আহমেদ

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.