মুসলিম বিবাহে প্রচলিত কিছু কুপ্রথা

আমাদের মুসলিম সমাজে বিয়েতে অনেক অনিয়ম বা  কুপ্রথা চালু রয়েছে যা ইসলামী শরীয়াহ সমর্থন করেনা। বরং ঐসব কাজ ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই নিন্দনীয়। আমাদের মুসলমানদের বিয়েতে যেসব অনিয়ম বা প্রথা রয়েছে সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু বিষয় নিয়ে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে আলোচনা করছি যা আমাদের উপকারে আসতে পারে।

পাত্রী দেখাঃ

আমাদের সমাজে পাত্রী বা মেয়েকে দেখার যে নিয়ম চালু রয়েছে তা সঠিক নয়। পাত্রীকে দেখতে গেলে ইসলামী নিয়ম মানা হয় না। যিনি বিয়ে করবেন, তার সাথে অনেক পুরুষ লোক দেখতে যান যাদের সাথে দেখা করা জায়েজ নয়। ইসলামী শরীয়াহ এর নিয়ম হলো, যিনি বিয়ে করবেন শুধু এবং তার মা, বোন, শিশু বাচ্চা এবং যেকোন পাত্রের নিকট আত্বীয় মহিলারা দেখতে পারবে।

মুসলিম বিয়েতে গায়ে হলুদের কোন রীতি নেইগায়ে হলুদঃ

বিয়ে-শাদীতে গায়ে হলুদের নিয়ম বর্তমান সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ আকার ধারণ করেছে। গায়ে হলুদকে কেন্দ্র করে অনেক আয়োজন, অনুষ্ঠান, গান বাজনা ও বেপর্দা মেলামেশা আমাদের দেশে হয়। অথচ ইসলামী শরীয়াতে গায়ে হলুদের কোন নিয়ম নেই।

অত্যধিক জৌলুস বা আড়ম্বরঃ

বিয়ে শাদীতে বর্তমানে জাঁকজমক বা আড়ম্বর অনেক বেশী করা হয়। বেশী আড়ম্বরপুর্ণ বিবাহ ইসলাম সমর্থন করে না। অনাড়ম্বর বিয়েটাই বেশী বরকতপূর্ণ। কিন্তু আমাদের এই সমাজে মহা ধুমধাম এর সাথে বিবাহ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। টাকা না থাকলেও ধার-কর্য করে, টাকা সুদের উপর ঋন করে এনেও অনেকে বিয়ের জমকালো আয়োজন করেন। যেটা খুবই অপছন্দনীয় কাজ।

বিয়ে শাদীতে বেপর্দার সয়লাবঃ

শরীয়াতের হুকুম অমান্য করে, জাহেলী কুপ্রথা চালু করা হয়েছে বর্তমান সময়ের বিয়েতে। বেপর্দা নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ হয়। যুবক যুবতীগণ এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া। আবার আছে পর-পুরুষের বউ দেখা। সেগুলো ভিডিও করে অন্য মানুষকে দেখান। এসবই গর্হিত কাজ যা ইসলাম সমর্থন করে না।

যৌতুক নেওয়াঃ

যৌতুক নেওয়া একটা জঘন্যতম কাজ। কিন্তু আজকাল বিয়েতে এসব বিষয় মানা হয় না।
লক্ষ লক্ষ টাকা যৌতুক ধার্য হচ্ছে বিয়েতে। বিভিন্ন আসবাবপত্রের জোর দাবী করা হচ্ছে। এভাবে মেয়ে পক্ষ থেকে জোর-জুলুম করে যৌতুক নেওয়া হয়। অথচ ইসলামী শরীয়াহ তে যৌতুক বলে কিছুই নেই। তবে বিয়েতে কনের বাবা বা আত্বীয় স্বজনেরা বরকে বা কনেকে উপহার হিসাবে অনেক কিছুই দিতে পারবেন।

মুসলিম বিয়েতে নাচ গানের আয়োজনবিয়েতে গান-বাজনাঃ

বিয়ে শাদীর মত পবিত্র অনুষ্ঠানে গান বাজনার সয়লাব। বিভিন্ন ধরনের গান বাজনার আসর বসে আজকালের বিয়েতে। একটা পবিত্র মজলিসকে কলুষিত করা হচ্ছে। গান বাজনা দ্বারা বিয়ের অনুষ্ঠান কখনই ইসলামী শরীয়াতে ছিলনা।

উকিল পিতা বানানোঃ

বিয়েতে উকিল বাপ পিতা বর্তমান থাকার পরও অন্যকে বানানো হয় যা শরীয়াত সন্মত নয়। শরীয়াতের নিয়ম হলো, উকিল বাপ হবে মেয়ের বাপ নিজেই বা অভিভাবকদের মধ্যে থেকে কোন মাহরাম ব্যক্তি যার সাথে দেখা দেওয়া জায়েজ আছে। ইসলামী বিয়েতে মেয়ের আইনগত অভিভাবকের অনুমতি অবশ্যই প্রয়োজন। যেসব মেয়ের বাবা বর্তমান আছেন তাদের বাবাই অভিভাবক, আরবীতে যাকে উকিল বলে। বাবার অবর্তমানে যিনি মেয়ের আইনগত অভিভাবক তিনি হলেন মেয়ের চাচা, মামা, ফুফা ইত্যাদি যিনি মেয়ের উকিলের দায়িত্ব পালন করবেন। আইনগত অভিভাবক ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে উকিল বানানো যাবেনা।

 

বিয়েতে খাবারের অপচয় খাদ্যের অপচয়ঃ

কিছু মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠানে খাদ্যের অপচয় ঘটায়। প্রচুর পরিমাণ খাবার নষ্ট হয়।মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন এর ঘোষণাঃ
“নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর প্রতি বড় অকৃতজ্ঞ।” (বনী ইসরাঈল-২৭)

 

 

ছেলের হাতে সোনার আংটিঃ

বিয়ের অনুষ্ঠানে বরের হাতে সোনার আংটি না পরালে মান সম্মান থাকেনা, অথচ পুরুষদের জন্য সোনা ব্যবহার হারাম।

মোহরানাঃ

আমাদের দেশে স্বামী মোহরানা না দিয়ে বাসর রাত্রে স্ত্রীর নিকট ক্ষমা চায়। অথচ ইসলামী বিধান মতে স্ত্রীরা মোহরানার হক্বদার যা অবশ্যই প্রদান করতে হবে।

বিয়ের গোসল দেয় ভাবিরাঃ

আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে বরকে বিয়ের গোসল দেয় ভাবিরা যা সম্পুর্ন গুনাহের কাজ এবং নিষিদ্ধ।

হাত ধুয়ে দিবে শ্যালিকাঃ

বিয়ে করলেন আপনি, আর বিয়ের অনুষ্ঠানে আপনার হাত ধুয়ে দিবে আপনার শ্যালিকা। অথচ শ্যালিকার সাথে দেখা দেওয়া, কথা বলা জরুরী প্রয়োজন ব্যতিত যায়েজ নেই।

নির্দিষ্ট দিন তারিখ দেখে বিয়ে করাঃ

চান্দ্র বর্ষের কোন মাসে বা কোন দিনে অথবা বর/কনের জন্ম তারিখে বা তাদের পূর্ব পুরুষের মৃত্যুর তারিখে বিয়ে-শাদী হওয়া যাবেনা- এরূপ চিন্তা ভাবনা করা ইসলাম সমর্থন করেনা।

মুসলিম বিয়েতে প্রচলিত কুপ্রথাহিন্দুয়ানী প্রথাঃ

বাঁশের কুলায় চন্দন, মেহদি, হলুদ, কিছু ধান-দুর্বা ঘাস কিছু কলা, সিঁদুর ও মাটির চাটি নেয়া হয়। মাটির চাটিতে তেল নিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। স্ত্রী ও বরের কপালে তিনবার হলুদ লাগায় এমনকি মূর্তিপূজার ন্যায় কুলাতে রাখা আগুন জ্বালানো চাটি বর-কনের মুখের সামনে ধরা হয় ও আগুনের ধোঁয়া ও কুলা হেলিয়ে-দুলিয়ে বাতাস দেয়া হয়। এসব হিন্দুয়ানী প্রথা ও অনৈসলামিক কাজ।

কদমবুসি করাঃ

বর ও কনের মুরব্বিদের কদমবুসি করা একটি মারাত্মক কু-প্রথা। বিয়েতো নয় এমনকি যেকোনো সময় পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার সাহাবীদের (রাযি আল্লাহু আনহুম) দ্বারা প্রমাণিত নয়। কদমবুসি করার সময় সালাতের রুকু-সিজদার মত অবস্থা হয়। বেশি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে হিন্দুয়ানী প্রণামকে প্রথা হিসেবে নিয়ে আসা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য নয়।

এভাবে বর্তমান সময়ে বিয়ে শাদীতে বহু অনিয়ম চালু রয়েছে। মূর্তিপূজারিদের নিয়ম কানুন সমাজের মানুষের রন্ধ্রে রন্ধে ঢুকে পড়েছে। বিবাহটা যে একটা ধর্মীয় কাজ সেটা আর কেউ খেয়াল করছে না। বিয়ে আল্লাহ্‌র হুকুম। তাই আল্লাহ্‌র অন্যান্য হুকুম আহকামকে আমরা যেমন গুরুত্বের সাথে আদায় করে থাকি যেমন, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ঠিক তদ্রুপ বিয়েও যেহেতু একটি আল্লাহ্‌র হুকুম তাই এই বিয়েকেও আল্লাহ্‌র হুকুম অনুযায়ী সম্পন্ন করতে হবে।

বিয়ে একটি ধর্মীয় কাজ। আর এই মুসলমানের বিয়েতে কিছু অন্যান্য ধর্মের প্রভাব বা কুসংস্কার যোগ হয়ে গেছে। আমাদের চেস্টা করতে হবে এসব অনিয়ম বা কুপ্রথা পরিহার করা। বিয়ে সম্পর্কিত কুরআন এবং সুন্নাহ এর কিছু নির্দশন পাওয়া যাবে এই লিংকে
আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.