বিয়ে দিন দিন জটিল হচ্ছে, সহজে আর বিয়ে হচ্ছেনা। বিয়ে কিভাবে সহজে করা যায় তা নিয়ে চিন্তিত অনেকেই। কিছু আইডিয়া জানা থাকলে খুব সহজেই আপনি বিয়ে করতে পারবেন। বিয়েটা ডট কম রয়েছে আপনার পাশে। রেজিস্ট্রেশন করলেই শত শত পাত্র/পাত্রীর প্রোফাইল আপনি দেখতে পারবেন। তারপরে প্ল্যান কিনে যাদেরকে পছন্দ অনুরোধ/প্রস্তাব পাঠান শুরু করবেন। সময় নেওয়া, প্ল্যান আপগ্রেড করা, বিয়েটার হেল্পলাইনের হেল্প নেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি সহজে বিয়ে করতে পারবেন।
বিয়ে করার সহজ উপায় সম্পর্কে কিছু আইডিয়াঃ
১। চাহিদাকে সীমিত করাঃ পাত্র হোক আর পাত্রীই হোক বেশি চাহিদার কারণেই বিয়ে সহজ হচ্ছেনা। যেমন, পাত্ররা চায় অনেক সুন্দরী লম্বা, শিক্ষিত আবার ভদ্র মেয়ে। কেউ কেউ এসবের সাথে চাকুরিজীবী পাত্রীও আশা করেন কিন্তু বয়স বেশি হওয়া যাবেনা এবং পারিবারিক অবস্থা ভাল হতে হবে ইত্যাদি।
পাত্রীরা আশা করেন পাত্র আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী, লম্বা, উচ্চ শিক্ষিত ও ভাল মনমানসিকতার হতে হবে।
এভাবে আমাদের চাহিদাগুলো এত ব্যপক যা এক পক্ষে পূর্ণ করতে পারলেও আরেক পক্ষ তা পূরণ করতে পারেনা, ফলে বিয়ে হয়না। তাই এক্ষেত্রে নিজের চাহিদাকে সীমিত করতে হবে। সবকিছু সম্পর্ণ পছন্দুযায়ী মিলবেনা-এটাকে মেনে নিতে হবে। যদি মেনে নেওয়া যায় তাহলে বিয়ে সহজ হবে।
২। বয়সকে খুব বেশি প্রাধান্য না দেওয়াঃ বয়সের অসমাঞ্জস্য বিয়ে না হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পাত্ররা আশা করে তাঁর স্ত্রী তাঁর চাইতে ৪/৫ বছরের ছোট হতে হবে। আবার পাত্রীরা আশা করে অবশ্যই পাত্রকে তাঁর চাইতে বয়সে বড় হতে হবে, সমান বয়সী বা ছোট হওয়া যাবেনা। কিন্তু দুনিয়াতে বহু সফল বিয়ের গল্প রয়েছে যেখানে বয়সের বিরাট পার্থক্য ছিল। তাই যদি পছন্দ হয়ে যায়, বয়সের কথা ভুলে যেতে হবে। হতে পারে পাত্রী আপনার বড় বা অনেক ছোট কিন্তু চেহারা পছন্দ, উচ্চতা পছন্দ- তাহলে এই একটি বিষয়ের কারণে কেন বিয়ে হবেনা। যদি এই বিষয়কে প্রাধান্য না দেওয়া হয় তাহলে সহজেই বিয়ে হবে।
৩। উচ্চতা নিয়ে বেশি চিন্তিত হওয়া যাবেনাঃ পাত্ররা কখনই নিজের চাইতে বেশি উচ্চতার পাত্রী বিয়ে করতে চাননা। একইভাবে পাত্রীরাও একই চাহিদা, পাত্রকে তাঁর চাইতে লম্বা হতেই হবে। কিন্তু বেশি উচ্চতার মেয়ে বিয়ে করলেই যে আপনি হেরে যাবেন বা কম উচ্চতার ছেলেকে বিয়ে করলে আপনি সফল হবেননা-এই ধারনা ভুল। যদি অন্যান্য সবকিছু মিলে যায় তাহলে এই উচ্চতা নিয়ে বেশি চিন্তিত হবেননা।
৪। সৌন্দর্য্যঃ সবকিছু মিলে গেলেও, মেনে নিলেও এখানে কোন ছাড় নেই। সুন্দরী হতেই হবে। পাত্র-পাত্রী উভয়েই কেউ এই বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি নয়। অথচ প্রাধান্য দেওয়া উচিত আপনাকে কে পছন্দ করেছে অর্থাৎ সে যদি সুন্দরও না হয় কিন্তু আপনাকে পছন্দ করেছে, তাহলে আপনি বিয়ের পরে বেশি আনন্দে থাকবেন। তাই অন্যের পছন্দকে প্রাধান্য দিলে নিজে সারা জীবন আনন্দে থাকবেন। কারণ, সে আপনাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য ব্যস্ত থাকবে।
৫। যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ একজন পাত্র/পাত্রীর পড়াশুনা, উচ্চতা, সৌন্দর্য্য সব কিছু পছন্দ হলেও শুধু পছন্দের এরিয়াতেই বা দূরে বাড়ি হওয়াতে বিয়েতে রাজি নয়। একটা সময় ছিল যখন ঢাকা থেকে রংপুর যেতে ৮/৯ ঘন্টা লাগতো কিন্তু বর্তমানে ৪/৫ ঘন্টা লাগে। তাই সেই দুরুত্ব থাকলেও সময় কিন্ত কম লাগে। এসব বিষয় বিবেচনা করলে বিয়ে সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া ইন্টারনেটের ব্যবহার, ভিডিও কলে যোগাযোগ ইত্যাদি কারণে এখন আর কেউ আসলে দূরে নয়।
৬। পড়াশুনাঃ পাত্ররা নিজের চাইতে কম বা সমমানের পড়াশুনা জানা পাত্রীকে বিয়ে করতে চাইলেও, পাত্রীরা এব্যাপারে সম সময় নিজের চাইতে বেশি আশা করে, কম পড়াশুনার পাত্রকে বিয়ে করতে চায়না। কিন্তু একটি মেয়ে বেশি শিক্ষিত হতেই পারে, তাই বলে তাকে বিয়ে করা যাবেনা। বিয়ের পরে সংসার চালাতে অর্থ লাগে, সাহস লাগে যা পুরুষের যদি থাকে তাহলে কম শিক্ষিত হলে অসুবিধা কি। তাই কম শিক্ষিত ছেলেকে বিয়ে করলে আপনার প্রতি ভালবাসা বেড়ে যাবে।
৭। পেশাঃ পেশার ক্ষেত্রে অনেক পাত্রীই চায় সরকারি চাকুরিজীবী বা ব্যবসায়ী বা প্রবাসে (ইউরোপ, আমেরিকায়) থাকতে হবে। যদিও তাঁর অন্যান্য বিষয় পছন্দ হলেও শুধু পেশা পছন্দ না হওয়ার কারণে বিয়ে হয়না। এক্ষেত্রে সম্মানজনক রিজিকের সাথে সম্পর্কিত কিনা সেটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাহলে বিয়ে সহজ হবে।
৮। পারিবারিক অবস্থাঃ বর্তমানে পাত্র উচ্চ শিক্ষিত, ভাল পেশার সাথে জড়িত কিন্তু পরিবারের অন্যান্য সদস্য কম শিক্ষিত বা ভাল পেশার সাথে জড়িত না হওয়াতেও বিয়ে হয়না। অথচ যদি পাত্র যোগ্যতা সম্পন্ন হয় তাহলে পরিবারের অন্যরা কম শিক্ষিত হলে বা কম যোগ্যতা সম্পন্ন হলে বরং বিয়ের পরে ঐ পাত্রী বেশি সম্মান ও ভালবাসা পেতে পারে।
৯। ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়াঃ ধর্মীয় শিক্ষা না থাকাতে চাহিদা বেশি থাকে। কারণ, তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব থাকে, অল্পতেই খুশি হতে পারেনা। যদি ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দেন তাহলে বিয়ে সহজ হবে। কারণ, ধার্মিক পাত্র/পাত্রীদের চাহিদা কম থাকে।
১০। দুনিয়াকে প্রাধান্য না দেওয়াঃ দুনিয়ার জীবনে যাদের শান্তিতে, আরামে, থাকতেই হবে একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে যায় সেই মানুষেরা নিজের পছন্দের ক্ষেত্রে কোন ছাড় দিতে পারেনা, ছাড় দিতে চায়না। ফলে তাদের জন্য বিয়ে কঠিন হয়ে যায়, সহজে বিয়ে হয়না। এই জন্য দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেওয়া যাবেনা। দুনিয়াতে জীবন কাটাতে হবে- এইজন্য জীবনসংগী প্রয়োজন। তাই বিয়ে করতে হবে, এভাবে চিন্তা করলে বিয়ে সহজ হবে।
১১। অল্প বাজেটঃ বিয়েতে প্রচুর খরচ যেমন, গায়ে হলুদ, বৌভাত, সাজ-সজ্জা, হানিমুন ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করেও বিয়েতে দেরী হচ্ছে। অথচ এগুলো কোন বাধ্যতামূলক বিষয় নয়। আপনি কনেকে দেখবেন, পছন্দ হলে কয়েকজনকে সাক্ষী রেখে, পিতা-মাতার উপুস্থিতিতে বিয়ে করে ফেলবেন। এরপরে আত্বীয় স্বজনদেরকে জানিয়ে দিবেন। পারলে খরচ করবেন, না পারলে করবেননা। এভাবে অল্প বাজেটে বিয়ের চিন্তা করুন, বিয়ে সহজ হয়ে যাবে।
১২। নিয়্যত করা ও প্রস্তুতি শুরু করাঃ আপনি বিয়ে করতে চাইলে প্রথমে নিয়্যত করুন এবং চেস্টা শুরু করে দিন। বিয়ে করবো, করতে হবে। এইজন্য পাত্র হলে কিছু অর্থ সঞ্চয় করুন। নিজের নিকট আত্বীয়দের জানিয়ে দিন।
১৩। টাইম লাইন ঠিক করাঃ আপনি কত দিনের মধ্যে বিয়ে করতে চান সেটা ঠিক করুন। ২ মাস ৬ মাস বা ১ বছর- নির্দিস্ট করুন। এভাবে টাইম লাইন নির্দিস্ট করলে নিজের মধ্যে বিভিন্ন প্রয়োজন ও প্রয়োজন পূরণের তাকিদ সৃষ্টি হবে। অন্যথায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
১৪। অর্থ বাজেট করুনঃ বিয়ে করতে আপনাকে অর্থ খরচ করতে হবে। সেই জন্য বাজেট ঠিক করুন। কনেকে দেখা, যাতায়াত, উপহার দেওয়া, বিয়েটার জন্য বাজেট নির্ধারণ করতে হবে। বরের জন্য নিজেকে সাজিয়ে তুলতে হবে। সেই জন্য সুন্দর পোশাক উভয়কে ক্রয় করতে হবে। বিয়ের সময় খরচ, বিয়ের পরবর্তী কয়েকমাস সুন্দরভাবে স্ত্রীকে পরিচালনার খরচ ইত্যাদি আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।
১৫। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখাঃ দুনিয়াতে কেউ পারফেক্ট নয়, এটা সম্ভব নয়। আপনার পছন্দের একটি লিস্ট করুন- যেমন বয়স, পেশা, পড়াশুনা, উচ্চতা, সুন্দর (ফর্সা, স্লিম, উজ্জ্বল শ্যমলা) ইত্যাদি। এখানে কোননা কোন বিষয়ে ছাড় দিতে হবে বা কোন বিষয়ে ছাড় দিবেননা সেটা মাথায় রাখতে হবে।
এতসব বিষয়ে মধ্যে ছাড় দেওয়ার মনমানসিকতাই আপনার বিয়েকে সহজ করে দিবে ইনশাআল্লাহ।