বিয়ে সময়মত না হলে বিয়ে হতে অনেক দেরী হয়ে যায়, যার ফলে প্রায় সবাই হতাশ হয়ে যায়।
বিয়ে নিয়ে হতাশায় কী করবেন?
নিজের চাহিদাকে কমাতে হবে, ছাড় দিতে হবে।
বিয়েতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আছে যেগুলোর কারণে বিয়ে হয়না বা দেরীতে হয় সেগুলো নিয়ে কিছু আলোচনা নিচে দেওয়া হল।
এসব জায়গায় কম্প্রোমাইস করলে আশা করা যায় বিয়ে নিয়ে হতাশা কেটে যাবে-
১। বয়সঃ বিয়ের ক্ষেত্রে সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এর মধ্যে একটি হল বয়স নিয়ে সমস্যা। কোন পাত্রীই সাধারণত তার চাইতে কম বয়সের পাত্রকে বিয়ে করতে চাননা। একইভাবে পাত্ররাও তাদের চাইতে বয়সে বড় মেয়েকে বিয়ে করতে চাননা। এই সমস্যার কারণে বহু মেয়ে অবিবাহিত আছে। অথচ দুনিয়াতে বহু সফল দম্পত্তি রয়েছে যাদের বয়সের পার্থক্য অনেক বেশি ছিল।
২। পেশাঃ সরকারি চাকুরিজীবী, ইউএসএ বা ইউকের নাগরিক হতেই হবে- এসব চিন্তা বাদ দিতে হবে। রিজিক মহান আল্লাহর জিম্মায়। সবকিছু থাকা সত্বেও কেউ জীবনে সুখী নাও হতে পারে আবার তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নেই তারপরেও সে সুখী হতে পারে। পেশার দিকে না তাকিয়ে সৎ মানুষ ও পরিশ্রমী কিনা সেটা দেখা উচিৎ।
৩। পড়াশুনাঃ মাস্টার্স পাস মেয়ে কমপক্ষে মাস্টার্স পাস ছেলে ছাড়া বিয়ে করতে চায়না। কেন? সামাজিক স্ট্যাটাস, কে কি বলবে, মানায় না ইত্যাদি। অথচ পাত্র এর বয়স পছন্দ, উচ্চতা ঠিক আছে, পেশা বা আর্থিক অবস্থা ভাল কিন্তু পড়াশুনা কম- পাত্রী পক্ষ রাজি হয়না। এতেও বিয়েতে বেশি সময় লাগে, বয়স বেড়ে যায়। অথচ বিয়ের পরে সব চাইতে বড় যোগ্যতা সংসার পরিচালনা করার মতন মানসিক অবস্থা এবং আর্থিক যোগ্যতা বেশি দরকার। তাই এক্ষেত্রে পাত্র পক্ষের সার্টিফিকেটকে গুরুত্ব না দিলে বিয়ের হতাশা কেটে যাবে, দ্রুত বিয়ে হবে ইনশাআল্লাহ।
৪। উচ্চতাঃ নিজের চাইতে বড় পাত্রকে বিয়ে করতেই হবে। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যাবেনা। অথচ পাত্র এর সবকিছু পছন্দ ছিল কিন্তু উচ্চতা কম। অথচ এটা কোন সমস্যাই না। আপনারা কি বিয়ের পরে উচ্চতা নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিবেন, না নিবেননা। সমাজ কি বলবে, বান্ধবীরা কি বলবে? এই বান্ধবীরাই স্বামী হারা থাকলে অপবাদ দিবে, লজ্জা দিবে- তার চাইতে স্বামী যদি উচ্চতা কমও হয় বিয়ে করা ভাল। এসব বিষয়ে মেনে না নিলে হতাশা বাড়বে আর মেনে নিলে দ্রুত বিয়ে হবে।
৫। ঠিকানাঃ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সহজেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া যায়। মোবাইল, ইন্টারনেটের ব্যবহার দূরুত্বকে আরো কমিয়ে এনেছে। তাই দূরুত্বের কারণে বিয়েতে রাজি না হওয়া বোকামী ছাড়া কিছুই নয়।
৬। আর্থিক অবস্থাঃ পাত্র বা পাত্রী পক্ষের আর্থিক অবস্থা ভাল হতেই হবে, ঢাকায় বাড়ি, নিজস্ব গাড়ি ইত্যাদি থাকতেই হবে। এসব চিন্তা করলেই বিয়ে পিছিয়ে যাবে। আপনার আর্থিক অবস্থা ভাল, তাই আরেক পক্ষেরও ভাল হতেই হবে। এসব চিন্তা না করলে বিয়ে দ্রুত হবে।
৭। ধার্মিকতাঃ ধার্মিকতা প্রাধান্য দিলে বিয়ে সহজ হবে। কারণ, ইসলাম শিখায় অল্পে তুস্ট থাকতে। আর আখিরাতে সবকিছু মনমত পাওয়া যাবে- এই চিন্তা করলে বিয়ে সহজ হবে।
৮। বংশঃ বংশের কারণেও বিয়ে হয়েও হয়না। এক্ষেত্রে মিলানোর চেষ্টা করতে হবে, নাহলে ছাড় দিতে হবে। কিন্তু বিয়ে দেরী করা ঠিক হবেনা।
৯। সৌন্দর্য্যঃ শারীরিক সৌন্দর্যতাকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে বিয়ে হচ্ছেনা। শারীরিক সৌন্দর্য্য ক্ষনস্থায়ী। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধরে রাখা যায়না। এই কথা মনে রাখতে হবে।
১০। বৈবাহিক অবস্থাঃ তালাকপ্রাপ্ত/ বিধবা/ বিপত্নীক পাত্র বা পাত্রীকে বিয়ে করতে চায়না অবিবাহিত পাত্র বা পাত্রীরা। ফলে বিয়ে হয়না। তালাকপ্রাপ্ত পাত্র বা পাত্রী যদি অবিবাহিত পাত্র বা পাত্রীকে বিয়ে করে সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে ভালবাসা বেড়ে যেতে পারে, কারণ এক পক্ষ থেকে অবশ্যই অনুগ্রহ পাওয়া যাবে।
১১। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করাঃ বিয়ের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করার কোন বিকল্প নেই। তিনি সব পারেন, তাই দোয়া করতে হবে, সবর করতে হবে।
১২। মাছনাতে আগ্রহী ননঃ অবিবাহিত বহু মেয়ে আছে আমাদের দেশে। বয়স বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু মাছনাতে রাজি নয়। অথচ স্বামীহিন থাকার চেয়ে মাছনা বিয়েতে রাজি হয়ে স্বামীর নিয়ন্ত্রনে থাকা অনেক ভাল। ইসলামি আদর্শের নারী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে এই মাছনার প্রচলন অনেক বেশি। তারা স্বামীহীন থাকাকে নিরাপত্তাহীন মনে করতো এবং পুরুষরাও যোগ্যতা থাকলে মাছনা করতো। তাই মাছনাতে রাজি হলে বিয়ের হতাশা কেটে যাবে। মাছনাতেও রাজি না হলে এক সময় স্বামীহীন থাকতে হবে।
১৩। বিয়ের আগেই মিল আশা করাঃ এই সমস্যা বর্তমানে প্রকট অর্থাৎ বিয়ের আগে সবকিছু মিল আশা করা।
এই মিল বিয়ের আগেই কিভাবে সম্ভব?
বিয়ের পরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল হয়ে যায়, হয়ে যাবে। কিছু ব্যতিক্রম তালাকের ঘটনার কারণে সবাই এই মিল বিয়ের আগেই আশা করে যা সম্ভব নয়, ফলেই হতাশা। তাই কিছুটা মিলে গেলে বাকিটার জন্য দোয়া ও চেষ্টা করতে হবে। বিয়ের আগেই সব মিলে যাবে এরুপ আশা না করলে বিয়ে সহজ হবে, হতাশা কেটে যাবে।