বিয়ে, স্বামী-স্ত্রী এবং ভ্যালেন্টাইন’স ডে

বরাবর বছরের মতোই ১৪’ই ফ্রেব্রুয়ারী আজ চলে এসেছে, সাথে ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। এই আধুনিক যুগে এসে ভালোবাসা দিবস বলতে বেশিরভাগ মানুষই শুধু মাত্র কাপল বা প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যকার সম্পর্ক বুঝে থাকেন। আসলে ভালোবাসা শুধু মাত্র এই দুটি মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকলেও এই দিনে এই দুটি মানুষের মধ্যেই এর উদযাপন বেশি লক্ষনীয়। অনেকেই মনে করে থাকেন, ভালোবাসা শুধুমাত্র বিয়ের আগেই থাকে, এবং এই দিবস শুধু অবিবাহিত প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্যই। ধারণাটি সম্পূর্ন ভুল না হলেও একদম ঠিকও না। বিয়ে যেমন একজোড়া কাপলের ভালোবাসার সম্পর্ককে সামাজিক ভাবে বৈধতার রূপ দেয়, তেমনি দুজন মানুষের মাঝে ভালোবাসার নতুন এক অধ্যায়ও সৃষ্টি করে। প্রশ্ন আসতে পারে, প্রথমটা ঠিক আছে, কিন্তু দ্বিতীয়টা কিভাবে?

 

স্বামী-স্ত্রীর জন্য ভ্যালেন্টাইন’স ডে

এরেঞ্জড ম্যারেজের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় পাত্র-পাত্রী একপক্ষ আরেক পক্ষকে আগে থেকে সেভাবে চিনে না । যদিও সেখানেও তাদের একে অপরকে চেনার জন্য সময় দেয়া হয়। সেই চেনা-জানা পর্বের পর কিন্তু বিয়ে হয়, এবং শুরু হয় “আমাদের জীবন” নামে নতুন এক অধ্যায়। ভালোবাসায় কমিটমেন্ট, লয়ালটি, অনেস্টটি, রেস্পেক্ট,  আন্ডার্স্ট্যান্ডিং এই বিষয়গুলো খুব বেশি জরুরি। এরেঞ্জড ম্যারেজের ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ের মাঝে এই সময়টা খুব উপভোগ্য হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। নতুন একজন মানুষের আগমন, সাথে নতুন সব কিছু। নিজেকে মানিয়ে নেয়া এবং নতুন মানুষটিকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করার মধ্য দিয়েই শুরু হয় বোঝাপড়ার পর্ব। যখন একজন আরেকজনকে বুঝতে পারে তাদের জন্য বাকি বিষয়গুলো অনেক স্মুথ হয়ে যায়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এরেঞ্জড ম্যারেজের ক্ষেত্রে তৈরি হওয়া ভালোবাসার সম্পর্কগুলো অনেক বেশি সুন্দর, সুইট এবং স্ট্রং হয়। এখানে হারিয়ে ফেলার ভয় খুব কম কাজ করে। তাই নিজেকে শুধরে নেয়া বা মানিয়ে নেয়া এবং অন্যকে বুঝতে ও মানাতে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে নিজেদের মধ্যে বন্ডিং চলে আসে, রেস্পেক্ট চলে আসে, বিশ্বাস চলে আসে।
কিন্তু আরেকটা সত্য হল, সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসাটা কেমন যেন মলিন হয়ে যায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। ভালোবাসা থাকলেও তার প্রকাশটা ঘটে না। এজন্য এই বিশেষ দিনটি হতে পারে ভালোবাসা প্রকাশের একটি দিন। একটু ঘুরতে যাওয়া, ছোট কিছু উপহার দেয়াই বিপরীত মানুষটির মনে আনন্দের উপলক্ষ হতে পারে।

ব্যস্ততা এবং ভালেন্টাইন্স ডে

এখনকার যুগে খুব বেশি ব্যস্ত সবাই, কারও সময় নেই কারও জন্য। সবাই কাজ নিয়ে এতো বেশি ব্যস্ত, নিজের ফ্যামিলিকে সময় দেয়ার মতো সময় হয় না। একবার ভেবে দেখুন, আপনি অফিস থেকে বাসায় ফিরছেন, যে মানুষটা আপনার লাইফে এসেছে শুধু আপনার জন্য, আপনাকে বুঝতে সে কতটা সময় পাচ্ছে। আপনার কি ভালো লাগে আর কি খারাপ লাগে, কিসে আপনি রেগে যান বা কিসে আপনার মুখে হাসি চলে আসে, এসব বিষয়গুলো বুঝতে দিন। আপনার লাইফের মানুষটাকে সময় দিতে কোনো বিশেষ দিনের জন্য অপেক্ষায় না থেকে সময় বের করে নিন, দেখবেন তার খুশিতেই আপনার খুশির সীমা থাকবে না। কোনো ছেলে বা মেয়ে’ই চায়না তাদের বিবাহিত জীবনে কোনো সমস্যা থাকুক। ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ভালবাসতে হয় আগে। ভালোবাসার মতো করে ভালোবাসতে শিখুন, বিয়ের পরের প্রেমটা কত বেশি সুন্দর আর উপভোগের হয়, শুধু তখনই আপনি বুঝতে পারবেন। ভালোবাসা দিবসটায় আপনার প্রিয়জনকে, আপনার লাইফ-পার্টনারকে বুঝতে দিন, আপনি তার জন্য এবং তিনি আপনার জন্য কত বেশি ইম্পর্টেন্ট। তাকে খুশি করুন, চেষ্টা করুন, আপনার খুশিটা সেখান থেকেই চলে আসবে।

আপনাদের প্রতিদিনই হোক ভালোবাসাময়।

লিখেছেন- মোঃ জিহাদ আহমেদ

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.