বৈবাহিক সম্পর্কে কীভাবে অন্তরঙ্গতা বাড়াবেন?

অন্তরঙ্গতা– দুজন মানুষের বৈবাহিক জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিয়ের আগে যখন দুজন মানুষের পরিচয়ও হয়নি, তখন বিয়ে ও বৈবাহিক পরবর্তী জীবন নিয়ে তাদের দুজনেরই থাকে নানা প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু যেটা ভাবনার বিষয় সেটা হল, দুজনই তাদের বিয়ে ও বৈবাহিক পরবর্তী জীবন নিয়ে অনেক কিছু ভেবে থাকলেও তাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষা বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়। তাই বিয়ের পর স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে ভালবাসা ও অন্তরঙ্গতার জায়গায় ঢুকে পড়তে পারে মানসিক দূরত্ব। কীভাবে সম্পর্কের মাঝে ভালবাসা ও অন্তরঙ্গতাকে আরও দৃঢ় করা যায়, সেটা নিয়েই আজ আলোচনা করব।

স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে তিন ধরনের অন্তরঙ্গতা থাকে- আবেগিক অথবা মানসিক, আধ্যাত্মিক ও শারীরিক, যেগুলোর প্রত্যেকটাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তিন ক্ষেত্রের যে কোনটিতেই পরস্পর অনরঙ্গতা ধরে রাখা কঠিন, যদি না তাদের সম্পর্কের মাঝে সঠিক আবহ বজায় রাখা যায়।

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে অন্তরঙ্গতা ধরে রাখার জন্য পাঁচটী বিষয়ের দিকে গভীরভাবে দৃষ্টি দিতে হবে-

১। পারস্পরিক আবদ্ধ থাকার অঙ্গীকারঃ স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যেই এমন একটা অনুভূতি কাজ করা জরুরি যে, তারা দুজনই সত্যিকার অর্থে পারস্পরিক অঙ্গীকারবদ্ধ। যদি এমনটা হয় শুধুমাত্র তখনই দুটি ভিন্ন জগতের মানুষ নিজের ভেতরের মানুষটিকে তার সঙ্গীর সামনে পুরোপুরি তুলে ধরতে সংকোচ করবে না। দুজনের একজনও যদি নিজেকে তার সঙ্গীর সামনে তুলে ধরতে সংকোচ করে, তাহলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কখনোই সত্যিকারের অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠবে না।

২। পর্যাপ্ত সময় ও সম্পর্কের মাঝে সঠিক গতিঃ স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যে পারস্পরিক পর্যাপ্ত ও নিরবিচ্ছিন সময় কাটানোর সুযোগ থাকতে হবে। নিজের সঙ্গীর কাছে নিজের আশা-আকাংক্ষা তুলে ধরা ও সঙ্গীর আশা-আকাংক্ষাও নিজে বুঝতে পারা- এ দুটি বিষয়ের জন্যই কিছুটা সময় নেওয়া উচিত। সত্যিকারের অন্তরঙ্গা গড়ে ওঠার জন্য মূল চাবি-কাঠি হল সময়। আপনার সঙ্গীর জন্য যদি আপনার কাছে পর্যাপ্ত সময় না থাকে, তাহলে কীভাবে আপনি পরস্পর কাছে আসার আশা করতে পারেন? ধীর গতি ও পর্যাপ্ত সময়-এ দুটোই সত্যিকারের পারস্পরিক অন্তরঙ্গতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

৩। গোপনীয়তা ও সীমানাঃ স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই নিজের সাথে অন্য লিঙ্গের কারও এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের মাঝে একটা ব্যবধান বা সীমানা গড়ে তোলা উচিত, যেন তারা খোলা মনে পরস্পরের সাথে মিশতে পারে এবং তাদের মাঝে একটা দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে ওঠে। স্বামী-স্ত্রী দুজনের কারও নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো সম্পর্কের বাইরের কারও সাথে আলোচনা করা উচিত না, যাতে নিজের সঙ্গীর বিশ্বাস ভাঙ্গে। বিশ্বাস ছাড়া কখনই পরস্পর কাছাকাছি আসা সম্ভব না।

৪। ঝুঁকিঃ জীবনের আর কোন ক্ষেত্রেই পারস্পরিক কাছে আসা ও অন্তরঙ্গ হওয়ার থেকে বড় ঝুঁকি নিতে হয় না। পারস্পরিক অনরঙ্গতার ক্ষেত্রে দুজনকেই খোলামেলা ভাবে পরস্পরের সামনে নিজেকে তুলে ধরত হয়, যেটা প্রকৃত অর্থেই অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু যেহেতু এই সম্পর্কের মাঝে দুই জনই ধীরে ধীরে পস্পরকে বিশ্বাস করতে শিখে, এ ক্ষেত্রে তাদের দুজনকেই কিছুটা ঝুঁকি নিতে হয় ও পরস্পরের উপর নির্ভর করতে হয়।

৫। প্রচেষ্টাঃ নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, নির্ভরতা ও অন্তরঙ্গতা তৈরি করতে প্রয়োজন ক্রমাগত চেষ্টা। এই ক্রমাগত চেষ্টা হতে হবে নিজ সঙ্গীর প্রতি প্রতিনিয়ত ভালবাসা, শ্রদ্ধা, সমর্থন প্রদর্শনের মাধ্যমে।

এই পাঁচটি বিষয় বিশেষ করে ক্রমাগত প্রচেষ্টা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে এক বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে, পরস্পরকে কাছে নিয়ে আসতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন যদি অপর জনের প্রতি সমর্থন প্রদর্শন না করে, তাকে কাছে আসার সুযোগ না দিয়ে ক্রমাগত দূরে ঠেলে দিতে থাকে, তাহলে অন্য জন কখনই তার সামনে নিজেকে মেলে ধরতে পারবে না। সংকোচ বোধ করবে। একে অপরের ভালবাসা প্রকাশের ভাষাটা বুঝতে হবে। একজনের ভালবাসার ভাষা হয়তো নিজেদের মধ্যে সুন্দর সময় কাটানো, ঘুরে বেড়ানো। আরেকজনের ভালবাসার ভাষা হয়তো একটু ছুয়ে দেওয়া, কাছে আসার চেষ্টা করা। তাই একে-অপরের ভালবাসার ভাষাটা বোঝা খুবই জরুরি এবং একে অন্যের ভালবাসার ভাষা প্রকাশের সুযোগ দেওয়াটাও খুব জরুরি।

প্রত্যকে স্বামী-স্ত্রী যদি নিজেদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই পাঁচটি বিষয়ের উপর জোর দেয়, ক্রমাগত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে, তাহলে তাদের মাঝে গড়ে উঠতে পারে গভীর ভালবাসা ও নির্ভরতার সম্পর্ক, অন্তরঙ্গতার সম্পর্ক।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.